যে প্রার্থীই হোক মাস্তানি করলে ছাড় নেই: ডিসি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম করা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমনকি অনিয়মের সাথে জড়িত প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা সাড়ে বারোটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে এক মতনিবিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এই সময় জেলা প্রশাসক ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু, রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ, রূপগঞ্জ ইউএনও আহসান মাহমুদ রাসেলসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রতীক বরাদ্দের সময় দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই সময় সম্মেলন কক্ষে ভাঙচুরও চালানো হয়।
এই ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) প্রতীক বরাদ্দের সময় একটি ঘটনা আমরা দেখেছি, এর তদন্ত হচ্ছে। যারা ওই ঘটনায় দায়ি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি যদি কোনো প্রার্থীরও সম্পৃক্ততা পাই তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।’
বিগত নির্বাচনগুলোর মতো পৌর নির্বাচনেও প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচন নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোথাও কিছু ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তাতে আমরা কোনো ছাড় দেইনি। জাল ভোট দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে এখনও জেল খাটছেন অনেকে। যারা অন্যের এজেন্টকে বের করে দিয়েছে বা জোর খাটিয়েছে, ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে তারাও জেলে। শাস্তিটা কিন্তু তাৎক্ষনিক হচ্ছে।’
‘ভোটের দিন জবরদস্তি করা যাবে না, জবরদস্তির কথা ভুলে যান। সন্ত্রাস করে, বৈধ বা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে কিছু করা তো দূরে থাক ভোটের দিন বাতাসও থমকে দাঁড়াবে। ভোটের দিন কিছু করার কথা আপনারা ভুলে যান। কেউ আগুনে ঝাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো ধরনের সমস্যা করলেই সাথে সাথে জেল দেওয়া হবে’, বলেন মাহমুদুল।
কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বা সমর্থককে বের করে দেওয়ার ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে প্রার্থীদের সতর্ক করে দেন ডিসি।
‘প্রার্থীও যদি মাস্তানি করতে যান তাহলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে প্রার্থী যেই হোন না কেন। কেননা আপনাদের কারও সাথে আমাদের কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। আপনারা কে মেয়র হলেন বা কাউন্সিলর হলেন তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না। সুতরাং একটি অসুস্থ ইলেকশনের দায় আমরা নেবো না’, বলেন তিনি।
প্রচারণার সময় আইন লঙ্ঘন না করার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ এই কর্মকর্তা। নির্বাচনের পরেও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল করার নিয়ম আইনে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু বলেন, ‘যেহেতু ঢাকার আশেপাশে আগামী ২৬ জুন কোথাও নির্বাচন নেই সুতরাং এই নির্বাচনে ফোর্স কিন্তু থাকবে পর্যাপ্ত। আমাদের জিম্মি করবেন না, তাহলে আপনারা কেউ পার পাবেন না। বহিরাগতদের সমাবেশ ঘটিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। এমনটা কেউ করলে সে থাকবে জেলে, এতে কোনো প্রার্থী মনক্ষুন্ন হলেও আমাদের কিছু করার নেই। আমরা যদি আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করি সেক্ষেত্রে সাংবাদিকরাও আমাদের জবাবদিহি করবেন। আমরা চাই একটা চমৎকার নির্বাচন উপহার দিতে।’
ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইস্তাফিজুল হক বলেন, ‘কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা কাঞ্চনে ঘটেছে। আমরা এর তদন্ত করছি। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা রয়েছে, সামান্য কিছু ঘটলেও তা যেন বরদাস্ত করা না হয়। আপনারা ভালো পরিবেশ রাখলে সাধুবাদ জানাবো কিন্তু বিশৃঙ্খলা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।’
মতবিনিময় সভায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
কাঞ্চনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মায়ারবাড়ি এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ করেন ‘জগ’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার (বাদশা)।