পূর্বাচলে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের রিসোর্ট জব্দ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের একটি রিসোর্ট জব্দ করা হয়েছে৷
শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বয়ে এক অভিযানে রিসোর্টটি জব্দ করা হয়৷ রিসোর্টের মূল ফটকে ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তি’ লেখা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছে প্রশাসন৷
এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত বহির্ভূত আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সাবেক এ আইজিপির সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত৷
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুর আলম৷ এ সময় দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনীও উপস্থিত ছিলেন৷
শফিকুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকার স্পেশাল জজ আদালতের নির্দেশে সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে সম্পত্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা এ সম্পত্তি আজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি৷’
জেলা প্রশাসন ও দুদকের সমন্বিত দলটি রিসোর্টের ভেতরটা ঘুরে দেখলেও ভবনটিতে ‘ডিজিটাল লক’ পদ্ধতিতে বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটি দোতলা ভবন, কিছু কুকুর ও পাখি রয়েছে৷ ভবনটি ডিজিটাল লক সিস্টেমে বন্ধ আছে৷ এটি খুলতে উপযুক্ত টেকনেশিয়ান ও যন্ত্রপাতি না থাকায় আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি৷’
এ সম্পত্তি কী করা হবে তা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে৷ আপাতত এ রিসোর্ট দেখাশোনার জন্য যে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন তারা সোমবার পর্যন্ত এখানেই থাকবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা৷
পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় গুতিয়াব মৌজায় পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ছয়টি প্লটের ২৪ কাঠা জমির উপর সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে এ রিসোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ চারপাশে কাঁটাতারসহ সীমানা দেয়াল দেওয়া রিসোর্টের ভেতরে একটি বিলাসবহুল ‘ডুপ্লেক্স বাড়ি’ রয়েছে৷ প্রশাসনের সাঁটানো ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে’ রিসোর্টটির মালিক হিসেবে বেনজীরের কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নাম উল্লেখ রয়েছে৷
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণবাগ এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে এ জমিটি আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে কেনা হয়েছিল৷ পরে এ জমিতে ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করেন৷ প্রায় সময় এ বাড়িতে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে আসতেন বেনজীর আহমেদ৷
তবে, গত তিনমাস যাবৎ কেউ আসেন না বলে জানান বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রতন মিয়া৷ ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাসিন্দা রতনের শ্বশুরবাড়ি গুতিয়াব এলাকায়৷ বাড়িটির মূল ফটকের ভেতর একটি ছোট কক্ষে থাকেন তিনি৷
রতন বলেন, ‘আগে তাঁর (বেনজীর আহমেদ) পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা এখানে আসতেন, থাকতেন৷ কিন্তু গত তিনমাস কেউ আসে না৷ বাড়িটি বন্ধই থাকে৷ আমরা দু’জন সামনের ছোট্ট ঘরটাতে থাকি৷ ভবনটির ভেতরে ঢোকার পারমিশন আমাদের নাই৷’
ডেমরা-ইছাপুরা সড়কের পাশে বেনজীরের এ রিসোর্টের জমির পূর্বের মালিক প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের ছেলে রামধন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রেমানন্দ সরকারের মৃত্যুর পর তাদের চারভাই এ জমির মালিক হন৷ অন্তত দশবছর আগে বালু দিয়ে জমিটি ভরাট করে পুলিশের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি৷ পরবর্তীতে ১ কোটি টাকা বিঘা দরে ৫৫ শতাংশ জমি কিনে নেওয়া হয়৷
‘আমরা তো এ জমি বিক্রি করতে চাইনি৷ বালু ভরাটের সময়ও বাধা দিছিলাম৷ কিন্তু তাগো লগে কী আর পারা যায়৷ পরে উপায় না দেইখা বিক্রি কইরা দিছি৷ ওই জমিতেই পরে বাড়ি করেন বেনজীর৷’
